সম্পর্কের অবক্ষয়

সম্পর্ক কথাটা বলতে যতটা সময় লাগে তার থেকে অনেক হাজারগুন ভারী অক্ষরগুলোর অর্থ এবং গুরুত্ব।

সম্পর্ক তো অনেকরকম হয়। বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, ঠাকুমা-নাতি, থেকে শুরু করে হাজারখানেক নাম দেওয়া সম্পর্ক পাওয়া যাবে কিন্তু এই প্রতিষ্টিত সম্পর্কের বাইরে আরো হাজার হাজার সম্পর্ক প্রতিদিন তৈরি হয়। 

আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার মধ্যে নতুন মানুষ আসেন, আমাদের সাথে একটা করে সম্পর্কের সূচনা হয়। বাসে, ট্রামে, লোকাল ট্রেন থেকে শুরু করে অন্যের বিয়েবাড়িতেও নতুন সম্পর্কের সুত্রপাত ঘটে।


এবার কিছু সম্পর্ক সমাজগতভাবে প্রতিষ্ঠীত। যেগুলোর সামাজিক অনুমোদন রয়েছে। যেন বাবা-মা, ভাই-বোন ইত্যাদি। তাছাড়া যেগুলো সদ্য তৈরি হয়ে চলেছে কিন্তু সামাজিক অনুমোদন পাইনি অথবা কিছু ক্ষেত্রে সমাজের বাইপাস করে রমরমিয়ে বেঁচে থাকে, সেগুলোও সম্পর্কের মধ্যে পড়ে।

এবার এতকিছু কিছু সম্পর্কের ভাগাভাগির মধ্যে কিছু জিনিস খুব কমন থাকে যেগুলো প্ৰকৃতপক্ষে সম্পর্কের ভীত, সম্পর্কের নিউক্লিয়াস, সম্পর্কের ডিএনএ। 


প্রতিটি সম্পর্কের মধ্যে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা একান্তই অনিবার্য। এই শ্রদ্ধা যেন কোষের মধ্যে থাকা ATP এর মত। এর অনুপস্থিতি ধীরে ধীরে দুটো মানুষের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়, ছিন্ন করে দেয় সম্পর্ক। 


মানবিক হতে হয় কোনো সম্পর্কে থাকতে হলে। ওপরের মানুষটার প্রতি মানবিকতা না দেখালে সেই সম্পর্কের তাৎপর্য হারিয়ে যায় ধীরে ধীরে। 

প্রেম ঠিক বাড়ি তৈরির সময় থরে থরে সাজানো ইঁটের মতো। সম্পর্কের মধ্যে প্রেম না থাকলে সেখানে অনুভূতির জন্ম নেয় না।

শ্রদ্ধা, মানবিকতা, প্রেম, অনুভূতি, মায়া, দুর্বলতা এইসব থাকলে তবেই ভালোবাসা আসে। আর সম্পর্কে ভালোবাসা থাকলে সেটাকে পূর্ন সম্পর্ক প্রকাশ পায়।

আজকাল তো, সম্পর্কের শ্রেণীবিভাগ শেষ হতে না হতেই সেই সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। একে অপরকে দোষারোপ করে, তীব্র ঘৃণা জন্ম নেয়।।

মানুষ এত দ্রুত, মানুষ এত জটিল যে তারা এতকিছু বোঝার অবকাশ পাইনা। তারা হয়তো এটা ভাবে যে, মানুষের অভাব হবে না, তাই এটা কেমিস্ট্রির মতো বিক্রিয়া চলতে থাকুক।


নিচের ছবিটা আমার খুব কাছের। জীবনে সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিতে বেরিয়েছিলাম বাড়ি থেকে বেরিয়ে অনেক দূরে। জানালার ধারে বসে তখন অসমুদ্র হিমাচল ভাবছি। ভুত- ভবিষ্যৎ ভাবতে ভাবতে গুলিয়ে যাচ্ছি আর এদিকে সেদিকে হাঁ করে তাকিয়ে দেখছি।

তখন এই দুই মানুষকে দেখলাম। দুই বৃদ্ধা ট্রেনে আধো ঘুমে চলছে। পরে জানতে পারলাম একজন মা আর অপরজন মেয়ে। মায়ের বয়স 96 এবং মেয়ের বয়স 69।  বড়ো আশ্চর্য্য হলাম এবং অভিভূত হলাম। ধীরে ধীরে কথা শুরু হলো। কথা হতে হতে তারা নিজের নাতির মতো ভালোবাসতে শুরু করলো। নেমে যাওয়ার আগে তার ফোন নাম্বারটি দিয়ে গেলেন। 

আশ্চর্য কি জানেন, এখনো সমানভাবে যোগাযোগ আছে। এখনো সেই ভালবাসা আছে। এখনো তাদের আর্শীবাদ লাভ করি। 

তাই সম্পর্কে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেটা আজকাল পাওয়া বড়ো দুষ্কর।

ও,আজ দিদার জন্মদিন। গতকাল ফোন করে জানিয়েছিলেন। 

হ্যাপি বার্থডে দিদা!!

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post a Comment (0)

নবীনতর পূর্বতন