এই যে লাল রঙ মাখিয়ে সূর্য্য মামা বাড়ি ফেরে, আর কিচিরমিচিরের দল তাদের বাসায় ফেরে- এই দৃশ্য জীবনে স্বর্ণ মুহুর্ত হয়ে থাকে আমার।
সবুজ ঘাসের উপর বসে যখন একভাবে তাকিয়ে থাকি তখন মুহূর্তে এই জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এক নীরব প্রশান্তি ঘন কুয়াশার মতো আচ্ছাদিত করে রাখে। নির্মল বাতাস যেন হৃৎপিণ্ডের প্রতিটি প্রকোস্টকে তাজা করে তোলে।
আমি বরাবরই গ্রাম ভালোবাসি। গ্রামে জন্মেছি বলেই হয়তো টান টা সমানভাবে আছে। আজকের এই ব্যস্ততার জগৎ থেকে শত যোজন দূরে কিছু মানুষ আছে যারা রোজ ভোরে উঠে ক্ষেতে যায়। রাস্তায় নিম গাছের ডাল ভেঙে দাঁতন পরিষ্কার করে নেয়, শিশির ভেজা ঘাসের উপর পা ভেজিয়ে সোনালী ফসল দেখে উৎফুল হয়। বাড়িটির এসে গিন্নিকে বলে আজ একটু বেশি করে ভাত দিও অনেক পরিশ্রম হয়েছে।
এইভাবে সারাটা দিন কাজের মধ্যে থেকে সন্ধ্যা বেলা গ্রামের সবাই একসাথে ঠাকুর দালানে গল্প করে। না , রাজনীতি নয়, ধর্মীয় বিভেদ নয়, এক প্রাণখোলা আড্ডা দেয় এরা।
সেদিন হারান কাকা বললো আমার কাকাকে, "কি রে পরশ, তোর মেয়েটাকে একটা ভালো কলেজে ভর্তি কর। বুদ্ধিতে খুব ভালো। আমাদের গ্রামে তো অর্ধেক পড়তেই চাইছে না। ও পড়তে চাই পড়া ওকে। গ্রামের নাম উজ্জ্বল হবে"।
হ্যাঁ, সুষ্ঠ আলোচনা আর নিজের কাজ নিয়ে থাকে এই গ্রামের অর্ধশিক্ষিত মানুষগুলো। ঠিকমতো মোবাইল ব্যবহার জানে না, ইংরেজি ভাষা জানে না, কলকাতা শুনলে বলে ওখানে তো বাবুরা বাস করে। সেই মানুষগুলোকে মিস করি।
আসলে প্রকৃত শিক্ষা আর জীবনের তাৎপর্য ঠিক কি তা পাঠ্য বই বা, অফিসের মিটিং থেকে ঠিক পাওয়া যায় না। তাই দূরে কাদা ঘাটা মানুষগুলোর কাছে যেতে হয় আর পরিশ্রমী হাত গুলো স্পর্শ করে একটা সালাম দিলে কিছুটা অনুভুতি লাভ করা যায় বইকি!!!
সুমিত মল্লিক
ছবিটি আমার গ্রামের।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন