রবিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২১

 সেই ছেলেটি।।


(হাসপাতালে থাকাকালীন)


শেষ পর্যন্ত ডাক্তারের চেষ্টাতে সেই রোগিটিও বাঁচলো না। CPR করছিল খুব জোরে জোরে। পাশের নার্স উদ্বিগ্ন হয়ে সাহায্য করছিল। আমি তখন তিনটে বেডের দূরত্বে খানিকটা হতাশা মুখে একভাবে তাকিয়ে রয়েছি। 

আমি জানি না তাকে। হাসপাতালে কত রোগী আসে আর কত রোগী যায় তার হিসাব রাখা দূর্দায়। কিন্তু রাত্রে নিজের কষ্ট নিয়ে যখন ঘুমকে বিদায় জানিয়েছি, তখন চারিদিকে মানুষগুলোকে একটু করে দেখে নিচ্ছি। আসলে এর ফলে নিজেকে কিছুটা সান্তনা দেওয়া যায়। নিজেকে বলা যায়, আমি শুধু একা রোগ ভোগ করছি না, হাসপাতালের কষ্ট নিচ্ছি না, আমার মতো অনেকে তারা নানা সমস্যায় জর্জরিত। 


বেশিক্ষন দেখতে পারছিলাম না কাউকে। কারন আমি খুবই অসুস্থ। আর সত্যি বলতে খুব একটা ভালো লাগছিল না। আমার উল্টো দিকের বেডের রোগীটা মারা গেছে দুপুরে। তার তিনটে মেয়ে। বাড়িতে তেমন কেউ নেই। তাই তার মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ারও কেউ নেই। নার্স একবার চিৎকার করে গেল। পরে সেও চুপ হয়ে গেল। স্যালাইনটা অনেকক্ষন আগেই বন্ধ হয়ে গেছিল। এবারে হাত থেকে খুলে নিল। মুখে সাদা কাপড় দিয়ে চলে গেল একটা কমবয়সী ছেলে। 


এবারে সেই রোগীটির পাশে একটি কমবয়সী ছেলেকে লক্ষ্য করলাম। আগে থেকে ছিল কিন্তু আমি অতটা খেয়াল করিনি। আসলে চোখের সামনে কাউকে মৃত্যুর সাথে লড়তে দেখে আমি হতভম্ব হয়ে পড়ি। তাই অতটা লক্ষ্য করা হয়নি। 


দেখলাম ছেলেটিকে ডাক্তার বললো, 98% চান্স নেই। তবু আমি চেষ্টা করছি। এই বলে নার্সকে দুটো ইঞ্জেকশন আনতে বললো। নার্স একটা স্টাফকে বলে দৌড়তে লাগলো। ছুটে ছুটে নিয়ে আসলো। সঙ্গে সঙ্গে তা শরীরে দিয়ে দিল। আমি একভাবে দেখছি। পাশে দাদা ছিল আমার সাথে। সে আমায় শুয়ে পড়তে বললো। আমি "হুঁ" বলে আবার দেখতে লাগলাম।


চোখের সামনে মৃত্যু আমি দেখেছি। সে ভয়ানক মৃত্যু। বর্ধমান মেডিকেল কলেজে দেখেছি। অনেকদিন কেমন সেই স্মৃতিতে থাকতাম। ভয়ানকভাবে আমায় নাড়িয়েছিল। আমি এই জন্যেই হয়তো ডাক্তার হতে পারিনি। কারন নার্ভের ক্ষমতা ডাক্তার হতে গেলে যা দরকার তা আমার নেই। কিন্তু মানুষ হিসাবে আমি চোখের সামনে মৃত্যুকে দেখতে পারিনা। 


যাইহোক, সেই ছেলেটি হলো রোগিটির ছেলে। বাবাকে চোখের সামনে দেখছে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছে। ডাক্তার বারবার বলছে চান্স খুব কম। ছেলেটাও কেমন পাল্টে যাচ্ছে। এদিক সেদিক দেখছে। আবার ডাক্তারের দিকে তাকাচ্ছে। 

আমি একবার শোবার চেষ্টা করলাম। কারন কোমরে যন্ত্রনা করছে। পাশ ফিরে শুয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। শুধু মনে মনে সেই যুদ্ধক্ষেত্র লক্ষ্য করলাম। কি ভীষণ ভয়ঙ্কর যুদ্ধক্ষেত্র। যেখানে একদিকে প্রাণবায়ু বেরনার উপক্রম। আর একদিকে জন্মের সমস্ত স্মৃতি, আদর, ভালোবাসা, মায়া, বন্ধন, সুখ, দুঃখ, শান্তি সবকিছু যেন বেষ্টনী করে রেখেছে। যাকে ভেদ করে স্বাভাবিক থাকা অসম্ভব মনে হলো। 


সেই যুদ্ধক্ষেত্রে সেই ছেলেটিকে দেখলাম, অভিমুন্যের মতো নিরস্ত্র অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন। যেন তার সীমাবদ্ধতা জেনে গেছে। তাই তার সমস্ত বাধাগুলোকে যেন বর্মের মতো নিজের শরীরে পরে নিচ্ছে। 


ক্রমশ.........

মঙ্গলবার, ৯ নভেম্বর, ২০২১

স্মৃতির পরীক্ষা

জেটি ঘাট থেকে শেষ নৌকো টা ছেড়ে গেল। মাঝি জোরে ডাক দিয়ে দাঁড় বাইতে শুরু করলো। মাঝি কেন জানি না, উদ্বেগের সাথে আমার দিকে তখনো তাকিয়ে রইলো। আমি পাশের ভগ্ন গাছের গুঁড়িটাই বসে নিঝুমে কারও অপেক্ষায়। অপেক্ষার হয়তো নির্দিষ্ট কারন নেই কিন্তু মায়ায় মোড়া স্মৃতিকে ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করছে না এই ধু ধু প্রান্তরে। 

সিগারেটের আগুন কখন নিভিয়ে গেছে তা টের পাইনি। পাশ ফিরে একটু অগোছালো ভাবে বসলাম। দূরে জাহাজের আলো দেখলাম। ধীরে ধীরে দক্ষিণের হিমেল হাওয়া কে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে চলছে গন্তব্যের দিকে। 

আমি কাঁধ থেকে ব্যাগটা নীচে রাখলাম। আগের সিগারেট আবার আগুন ধরাতে গেলাম কিন্তু সে আর জ্বলে উঠলো না। 

হয়তো, কিছু বলতে চাইলো। আমি তবু অগ্রাহ্য করে, নতুন সিগারেট নিলাম। হঠাৎ দমকা হাওয়া যেন বাধা দিল। হয়তো বললো, প্রতীক্ষার পরীক্ষা আর নিও না। বাড়ি ফিরে যাও। মাঝি এখনো খুব দূর যায়নি। ডাক দিলেই বাওয়া বন্ধ করে দেবে।

 আমি তখনো পেছনে স্মৃতির দলকে স্পষ্ট অনুভব করছি। যেন হয়তো সে অতীতের মাটি মেখে আমায় রাঙিয়ে তুলবে। তাই স্মৃতির ওপরে ভবিষ্যৎ ভাবছি। 


শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০২১

 

প্রেমিকা

আমার প্রেমিকা বড্ডো মোহময়ী। তার রূপ আর ব্যবহার কোনোদিনও বুঝতে পারি না। কখনো অভিমান করে থাকে আবার সে খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে। তার গম্ভীরতা আমায় ব্যাকুল করে তোলে। যেন, কতদিন মন খারাপ করে আমার সাথে দূরে থাকতে চাইছে।
আমার প্রেমিকা বড্ডো বেখেয়ালি। মনের কোনে জমিয়ে রাখা অনুভূতি যে কখন আমায় অবসন্ন করে দেয় তা টের পাই না। আবার ক্ষনিক সময়ের অবকাশে নিজেকে পাল্টে এক শিশুর মতো অনাবিল আনন্দ মেতে ওঠে।
আমার প্রেমিকার হার না মানা জেদ। সমুদ্রের গভীরতাকেও নত হতে হয় তার পরিশ্রমের কাছে। ইচ্ছের ডানা গুলো সর্বদা যেন আকাশের দিকে চলতে থাকে।
আমার প্রেমিকা একটু আলগোছে। মেঘেদের সাথে মিশে সৌন্দর্যের প্রকটতা কমিয়ে জানালার ধারে বসে ভবিষ্যতের কথা লেখে। আর বর্তমানের স্মৃতিতে ঝরে যাওয়া বসন্তের পাতা রাখে।
সে এক সাধারণ খুবই সাধারণ। শিউলি ফুলের শুভ্রতা নিয়ে সাধারণ সময়কে এক বিশেষ সময়ে পরিবর্তন করে। গোলাপের রূপদিয়ে ভারাক্রান্ত মনকে সতেজ করে। জুঁই ফুলের সুবাসের মতো হৃদয়কে পুষ্ট করে প্রতিক্ষণে।
আমার প্রেমিকা এক সাধারণ মানুষ।


মঙ্গলবার, ২ নভেম্বর, ২০২১

 



পুজোর ব্যাপারটা আর তেমন আনন্দ দেয় না। না, একেবারে আনন্দ দেয় না বলতে পারবো না তবে আগে যেমন কলকাতাতে ঠাকুর দেখার যে উন্মাদনা ছিল বা কেনাকাটা তে উৎসুক ছিলাম এখন তা প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে।

এখন তো শুধু নির্জন জায়গায় প্রকৃতির কোলে বসে দিনের পর দিন কাটিয়ে দিতে রাজি আছি। শহর থেকে অনেকটা দূরে পাহাড়ের কোলে। সারাদিন মেঘেদের খেলা দেখা আর রাত্রে দূরের পাহাড় জোনাকির মতো মিটমিট করবে তা অনুভব করার মধ্যে অসীম আনন্দ আছে, স্বস্তি আছে। এক ভয়ঙ্কর নির্জনতা যেন আগামীকালের চিন্তাভাবনা গুলোকে নিমেষে কফির মাগে চুবিয়ে নির্লিপ্তভাবে পান করে। তা বেশ ভালোই লাগে আমার। অতীতের ভালো খারাপের ঘটনা মাঝে মাঝে পাহাড় ছেড়ে উকি মারে কিন্তু ওই যে পাহাড়ের পরিবেশটা সবকিছু নিমেষে বৃষ্টির মতো ধুইয়ে শূন্য করে দেয়।
মাঝে মাঝে সমুদ্রের কাছে গিয়ে নিজ স্বীকারোক্তি করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে সমুদ্র নিজ চালে চলতে ব্যস্ত। সর্বদা নিজের গতিবেগে আর নিজের রূপে ধরা দেয়। হয়তো শুনে আমার কথা আর তখন মনটা হালকা হয়ে যায়। কিন্তু পরে আবার সব কিছু ফিরিয়ে দেয়, সেই ভার আবার হৃদয়ে বহন করে বাড়ি ফিরি।
আসলে বয়স এক অদ্ভুত জিনিষ। পরিবেশ আর পরিস্থিতি তার সাথে সমানে হাত মেলায় আর আমাদের অনুভূতি, ইচ্ছে, ভালোলাগাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। একসময় ঠাকুর দর্শনের জনজোয়ারে সামিল হয়ে সেই পাগলামো অস্থিরতাকে জাগিয়ে রাখতাম। ধীরে ধীরে মন চাকচিক্যের বাইরে উকি দিতে শুরু করলো। দেখলাম, সত্যিই এক অসাধারণ বাস্তব নিজ রূপে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাস, সেই থেকে কেন যেন মনটা পর্যায় সরণির হিলিয়াম গ্যাসের পাশে অবস্থান করতে শুরু করলো।
শুভ পঞ্চমী সকলকে। ভালো থাকুন সক্কলে।



 দশমীর দিন। মনের মধ্যে ধীরে ধীরে মনখারাপের মেঘেরা জমা হতে শুরু করেছে। যদিও নবমীর নিশি মন খারাপের সূচনা করেছিল। যাইহোক, দশমীর দিন মা কৈলাশে যাওয়ার জন্য তোড়জোড় করছিল। আমি খানিক আবেগে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। মনে হচ্ছিল যেন এই তো এলে, আর কদিন থাকলে কি এমন ক্ষতি হবে। তুমি তো সব কাজ ম্যানেজ করতে পারো। তাহলে এত তাড়া কেন? তুমিই তো সবার বস।

যাইহোক, হঠাৎ মায়ের কাছে গেলাম। পা ছুঁয়ে প্রণাম করলাম। মনে খানিকটা প্রশান্তিঅনুভব করলাম। একবার ওপর দিকে তাকালাম মায়ের চোখে। মায়ের মনের অবস্থা আমার থেকেও খারাপ মনে হলো। কিন্তু মা তো কাউকে বুঝতে দেয়নি। তাই, ব্যাপারটা চেপে রেখে সেই স্বমহিমায় রইলেন।
সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর দিনে মাকে উৎসর্গ করে অঞ্জলী নিয়েছিলাম। মায়ের কাছে গিয়ে অর্ঘ্য অর্পণ করেছিলাম। কিন্তু দশমীর দিন সেইরকম ব্যবস্থা ছিল না। কি করবো বুঝতেই পারছিলাম না। হঠাৎ পাশে গোলাপ ফুলটি ছিল। সেদিন মা কে দিলাম।
আসলে গোলাপ ফুল প্রেম নিবেদনের মাধ্যম বলা হলেও আমি গোলাপ ফুলকে একটু অন্য চোখে দেখি। তাই আমি মাকে গোলাপ ফুল দিই। আমাদের একাডেমি তে "Mother's Day" উদযাপনের দিন মাকে গোলাপ ফুল দিয়ে মায়ের অমূল্য ভালোবাসা নিই।
তো যাইহোক, মাকে গোলাপ ফুল দিতেই মা বললো, হুম বুঝেছি, তুই তো আর কাউকে পটাতে পারলি না তাই আমার শরণাপন্ন হচ্ছিস।
আমি খানিক হেসে বললাম, মা, তুমি পাশে থাকলে সবাইকেই জয় করা যায়।
কি জানি মনে হলো, মা পিঠ চাপড়ে দিয়ে কাছে টেনে নিল।
আসলে মায়েরা এইরকমই হয়। কারন পৃথিবীতে সবচেয়ে কাছের মানুষ "মা"-ই হয়।

 ধোত্রের পরম বন্ধু জ্যাক

---------------------------------


আপনারা যদি কোনোদিন ধোত্রে যান তাহলে এনার অবশ্যই দেখা পাবেন। আমিও দেখা পেয়েছিলাম। প্রথমে অত জানতাম না। ধোত্রে তে যে ওয়াচ টাওয়ার আছে ওখানে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি ইনি আমার সামনে সামনে চলতে শুরু করলো। একটু একটু করে এগিয়ে গিয়ে শুঁকে এসে আবার আমার সামনে সামনে চলতে শুরু করলো। আমি এবারে খানিকটা অবাক হলাম। সাধারণত এইরকম ব্যবহার পোষা প্রানীরা করে। যাইহোক, ওখানে যতক্ষন ছিলাম ততক্ষন এও ছিল।
বেশ ভালো লাগলো ব্যবহার দেখে। আসার পথে বিস্কুটের প্যাকেট কিনে খাইয়ে দিলাম।
এরপর আমার রুমে চলে এলাম। চমক তখন বাকি ছিল। পরের দিন ধোত্রে থেকে টংলু যাব ট্রেক করে। রেডি হতে দেরি হলো। একটু দেরি করেই হাঁটা শুরু করলাম। যাইহোক যখন টংলু তে পৌঁছালাম আমি অবাক হয়ে গেলাম। দেখি ইনি অলরেডি হাজির হয়ে গেছেন। আমি তো অবাক। এ তো ধোত্রেতে ছিল তা এখানে এত দূরে কিভাবে এল?
সেসময় দুজন বললো, তারা সকাল বেলা যখন ধোত্রে থেকে আসছিল তখন পুরো রাস্তা গাইড করে নিয়ে এসেছে। এ কথা শুনে আমি আরো আনন্দিত হলাম। ভাবতে থাকলাম পশুরায় একমাত্র এইরকম আছে যারা বিনা স্বার্থে এইরকম ব্যবহার উপহার দেয়। পরে জানতে পারলাম, প্রতিদিন এইভাবে বিভিন্ন ট্রেকার্স দের দলকে এইভাবে গাইড করে নিয়ে যায়।
যাইহোক রাত্রে বেলা আমার বিছানায় ঘুমালো। কারন যাদেরকে গাইড করে নিয়ে এসেছিল তারা রাত্রে রুম থেকে বের করে দিয়েছিল। আমি খুবই কষ্ট পেলাম এই ব্যবহারে। যাইহোক ও দেখলাম আমার রুমে এসে বসেছিল। কেউ কিছু খেতেও দেয়নি। অগত্যা আমার সাথে যা ছিল খাবার সেটাই দিয়ে ডিনার সারলো।
ধোত্রে থেকে টংলু যাওয়ার জন্য এক ভরসা যোগ্য বিনে পয়সার সঙ্গী। এর থেকে ভালো গাইড হতে পারে না। এক অদ্ভুত সঙ্গী পাবেন আপনার 4 ঘন্টার পথে।
যদি ধোত্রে যান অবশ্যই জ্যাকের সাথে দেখা করবেন। ধোত্রে গ্রামের মানুষজন যেমন সহজ সরল ঠিক তেমনি সেখানকার পশুরা। আমাদের কাছে যা এক শিক্ষণীয় বিষয়।



এই যে লাল রঙ মাখিয়ে সূর্য্য মামা বাড়ি ফেরে, আর কিচিরমিচিরের দল তাদের বাসায় ফেরে- এই দৃশ্য জীবনে স্বর্ণ মুহুর্ত হয়ে থাকে আমার।
সবুজ ঘাসের উপর বসে যখন একভাবে তাকিয়ে থাকি তখন মুহূর্তে এই জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এক নীরব প্রশান্তি ঘন কুয়াশার মতো আচ্ছাদিত করে রাখে। নির্মল বাতাস যেন হৃৎপিণ্ডের প্রতিটি প্রকোস্টকে তাজা করে তোলে।
আমি বরাবরই গ্রাম ভালোবাসি। গ্রামে জন্মেছি বলেই হয়তো টান টা সমানভাবে আছে। আজকের এই ব্যস্ততার জগৎ থেকে শত যোজন দূরে কিছু মানুষ আছে যারা রোজ ভোরে উঠে ক্ষেতে যায়। রাস্তায় নিম গাছের ডাল ভেঙে দাঁতন পরিষ্কার করে নেয়, শিশির ভেজা ঘাসের উপর পা ভেজিয়ে সোনালী ফসল দেখে উৎফুল হয়। বাড়িটির এসে গিন্নিকে বলে আজ একটু বেশি করে ভাত দিও অনেক পরিশ্রম হয়েছে।
এইভাবে সারাটা দিন কাজের মধ্যে থেকে সন্ধ্যা বেলা গ্রামের সবাই একসাথে ঠাকুর দালানে গল্প করে। না , রাজনীতি নয়, ধর্মীয় বিভেদ নয়, এক প্রাণখোলা আড্ডা দেয় এরা।
সেদিন হারান কাকা বললো আমার কাকাকে, "কি রে পরশ, তোর মেয়েটাকে একটা ভালো কলেজে ভর্তি কর। বুদ্ধিতে খুব ভালো। আমাদের গ্রামে তো অর্ধেক পড়তেই চাইছে না। ও পড়তে চাই পড়া ওকে। গ্রামের নাম উজ্জ্বল হবে"।
হ্যাঁ, সুষ্ঠ আলোচনা আর নিজের কাজ নিয়ে থাকে এই গ্রামের অর্ধশিক্ষিত মানুষগুলো। ঠিকমতো মোবাইল ব্যবহার জানে না, ইংরেজি ভাষা জানে না, কলকাতা শুনলে বলে ওখানে তো বাবুরা বাস করে। সেই মানুষগুলোকে মিস করি।
আসলে প্রকৃত শিক্ষা আর জীবনের তাৎপর্য ঠিক কি তা পাঠ্য বই বা, অফিসের মিটিং থেকে ঠিক পাওয়া যায় না। তাই দূরে কাদা ঘাটা মানুষগুলোর কাছে যেতে হয় আর পরিশ্রমী হাত গুলো স্পর্শ করে একটা সালাম দিলে কিছুটা অনুভুতি লাভ করা যায় বইকি!!!
সুমিত মল্লিক
ছবিটি আমার গ্রামের।


 জীবনটা খরস্রোতা নদীর মতোই ধাবমান

---------------------------------------------------------


পাহাড়ি নদী যেমন গর্জন করে বয়ে চলে, নদীর যেমন বন্ধন থাকেনা পাথরের সাথে, সখ্যতার অনুভূতি থাকে না সদ্য গজিয়ে ওঠা অচেনা সবুজ গাছেদের সাথে, ভালোবাসার টান থাকে না আগের মুহুর্তের সাথে, স্বচ্ছ জলের প্রতিবিম্বের সাথে আবেগ থাকে না, সৌন্দর্য উপভোগ করার সময় থাকে না, সদ্য মিলিত হওয়া কাদামাটির সাথে সম্পর্ক থাকে না, নিজের ঠান্ডা জলে পথিকের ক্লান্তি দূর করার অহংকার থাকে না, উৎস থেকে বয়ে আনা বন্ধুদের সাথে মজবুত বন্ধন থাকে না,
ঠিক তেমনি আমাদের জীবনটাও ওর মতোই। ভালো খারাপ ভাবার সময় নেই, সম্পর্কের টান নেই, ভালোবাসার অনুভূতি নেই, অনিচ্ছার বিরোধিতা নেই, মোহের বিচ্ছিন্নতা নেই, ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ নেই, ভাবনার মুক্ত পরিবেশ নেই, মনের আরাম নেই, বিরহের উদাসীনতা নেই। শুধুই এক জীবন বয়ে চলে।
এক অন্তত গতিবেগে নিরুদ্দেশ পাড়ি দেওয়ার সর্বদা প্রতিযোগিতা চলছে। পরিবারের সেই পুরনো বন্ধন, মায়ের কাছে আদর, বাবার সাথে আড্ডা দেওয়া, ভাই বোনদের সাথে খুনসুটি করা, বদমায়েসি করে ঠাকুমার কাছে আশ্রয় নেওয়া, সন্ধ্যা বেলা বন্ধুদের সাথে ফাজলামি,ইয়ার্কি করা সব যেন জীবনের খরস্রোতা নদীতে হারিয়ে গেছে।
হারিয়ে যাচ্ছে ভালোবাসা, হারিয়ে যাচ্ছে অনুভূতিকে জড়িয়ে নতুন স্বপ্ন বোনার ইচ্ছেগুলো। আর ইচ্ছেগুলোও তো শিকারির ফাঁদের দিকে মরীচিকার মতো অগ্রসর হচ্ছে।
সুন্দর জীবন যে ঠিক কি তা বুঝতে চাওয়ার সময় কোথায়!! আর সময় যে কিভাবে চালনা করে তার ধারণার বহিঃপ্রকাশ আজও সুপ্ত বীজের ন্যায় মাটির নিচে অপেক্ষা করছে।
জীবনটা খরস্রোতা নদীর মতোই বন্ধনহীন ভাবে বয়ে চলছে।

বসন্তের বিলাপ

শীত যাবে, বসন্ত আসিবে নীরবে। তারপর ঝরাপাতা ঠাঁই হবে কুড়ানির ঘরে, তবু বৃক্ষ স্বপ্ন দেখে, বসন্তের বিকালে, রঙিন পাতা বিছিয়ে দেবে, প্রেমিকার তরে...

Popular